Skip to main content

ইদের আনন্দ পরিবহন নৈরাজ্যে মলিন!! ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৫ থেকে ১০ গুণ।।

 ইদ মানুষের জীবনে আনন্দের সাথে ভুগান্তিও কম নিয়ে আসে না। তবে সে ভুগান্তি আমাদের মতো মানুষেরই সৃষ্টি। 


ইদকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায়,অশালীন আচরণ, যানজট সমস্যা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ নানাবিধ বিষয়ে প্রশাসন সহ পরিবহন মালিক শ্রমিক সমিতির সদস্যের সাথে আলোচনা হয়েছে ইত:পূর্বে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ এলাকায় যাত্রীসাধারণের যাতায়াত ভাড়া,যানজট ইত্যাদি বিষয়ে সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করতে লিগ্যাল এসিস্ট্যান্স ফর ভালনারেবল সোসাইটি এবং নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের সদস্যবৃন্দ, রিপোর্টার সহ অনেকেই উপস্থিত হন। সাথে ছিলাম আমিও। 

যেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যাত্রা করেছিলাম তা পথিমধ্যেই পর্যবেক্ষণের সৌভাগ্য হয়েছিলো আমার। গফরগাঁও থেকে ময়মনসিংহ যেতে ১৫০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়েছে আমাকে।  ড্রাইভারের কাছে জানতে চাইলে সহজ সরল উত্তর দিলেন "জিপি বাড়ছে"। একজন ড্রাইভার বললেন " আগে আমরা জিপি দিতাম ৭০ টেহা। মাস্টরের ৫০ টেহা আর পৌরসভা ২০ টেহা। আর আজকে মাস্টরের দিছি ২০০ টেহা আর পৌরসভার ১০০ টেহা।" 

আর একজন ড্রাইভার এসে বললেন গ্যাস নিতে এখন বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে। 

ময়মনসিংহ থেকে আসার সময়ও ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম ভাড়া কত? ড্রাইভার বললেন ১৫০ টাকা। জানতে চাইলাম বেশি কেন? সরল সুন্দর একখানা হাসি দিয়ে বললেন "সারা বছর আমহেগরে লইয়া যাই-আই। ইদের সময় ৩০ টা টেহা দিতাইন না?"

হ্যাঁ। আমরা ইদের জন্য ৩০টাকা বেশি দিতেই পারি। কিন্তু সেই টাকাটা কি আসলেই ড্রাইভাররা পাচ্ছেন?  তাদেরই ভাস্যমতে জিপিসহ বিভিন্ন জায়গায় টাকা দিতে গিয়ে তাদের কাছে থাকে না কিছুই। 

যাত্রাপথে বালিপাড়া(আউলিয়ানগর) ব্রিজ মোড়ে দেখা গেলো ৩/৪ জন মিলে ছোট একটা ট্রাক দাড় করালো। জানতে পারলাম তারাও নাকি অপরিচিত গাড়িগুলো দাড় করিয়ে পবিত্র কাজটি(চাদা তোলা) করছেন। 

ময়মনসিংহ গিয়ে অভিজ্ঞতা চরমে উঠলো। প্রচন্ড রোদের মাঝে পিলারের একটুখানি ছায়ায় কেউ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন,কেউবা দাড়িয়ে। যাত্রীসহ অনেক ড্রাইভারের সাথেও কথা হলো। তাদের সহজ স্বীকারুক্তি। ভাড়া যেখানে ৩০টাকা সেখানে নেয়া হছে ২০০/৩০০টাকা। যেখানে ১০০টাকা সেখানে নেয়া হচ্ছে ৫০০/৬০০টাকা!! 

সেখানকার ড্রাইভারদেরও একই অভিযোগ। অর্থাৎ জিপি,চাদা,জানজট,গ্যাস নিতে সমস্যা ইত্যাদি। 

সবকিছু দেখে যাত্রীসাধারণকে খুব অসহায় মনে হলো। মাঝ রাস্তায় এসে ইদের আনন্দটুকু তাদের কাছে কান্নায় পরিণত হলো!!! 

দায়িত্বরত কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেলো এসব তারা জানেন না!  আর যারা জানেন তারা একে অন্যের উপর দায় চাপানোতে ব্যাস্ত। 

আসলে এ দায় কার??? আমরা যারা এর ভুক্তভোগী নই, তারাও কি এই দায় থেকে মুক্ত? আমাদের কি কিছুই বলার নেই? কিছুই করার নেই? সমাজের জন্য, দেশের জন্য ভাবার প্রয়োজন আমাদের আছে কি? 

তবে আমরা একেবারে নিরাশ হইনি। পরিস্থিতি সম্পর্কে মালিক সমিতি সহ প্রশাসনকে অবগত করায় দ্রুততম সময়ে শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ এলাকায়  একজন ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হয়েছে, সাথে সংগঠন সহ সুশীল সমাজের সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। 

ধন্যবাদ প্রশাসনকে দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। কৃতজ্ঞতা সংগঠনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি।      এ ধারা অব্যাহত থাকুক।   

 শুভ হোক সকলের ইদ যাত্রা। আনন্দময় হোক আমাদের পৃথিবী।  

                   


Comments

Popular posts from this blog

ঈদ আমেজে, আবেগ-অনুভূতিতে নতুন মাত্রা

আমার সন্তান,  আমার নতুন পৃথিবী। ভিন্নধরনের আবেগ অন্যরকম এক অনুভূতি নিয়ে নতুনভাবে ঈদের আনন্দ উপভোগ করাটা আমার জীবনে এই প্রথম । এমন একটা সময় ছিলো যখন ঈদের আগমনের কথা ভেবে নয়,নতুন পোশাকের আশায় ঈদের আগমনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। ৩০ টাকা দামের একটা শর্ট প্যান্ট পেলেও মনে হতো আমি পুরো পৃথিবীটাই পেয়ে গেছি। সেই সময়টা আজ কেবলই স্মৃতি। দিনে দিনে দিন পেরিয়ে আজ এমন একটা সময়ে পৌঁছে গিয়েছি সেখানে পুরো পৃথিবীর সব পাওয়াটাকে অন্য কিছুতে খুঁজে বেড়াই। এখন প্রতি ঈদেই  ৩০ হাজার টাকা খরচ করলেও নিজের জন্য ৩০ টাকার জিনিস কেনার কথা মনেই থাকে না। এটা অভাবের তাড়নায় নয়,মনের ভুলেই হয়ে যায়। অথচ মনের মধ্যে বিন্দুমাত্র অপ্রাপ্তিও কাজ করে না। একেই হয়তো বলে অভিভাবকত্ব। আমার বাবাও হয়ত এতেই পরম প্রাপ্তি অনুভব করেছেন। আজ আমিও বাবা। বিরতিহীন দুষ্টুমিতে পটু আমার মেয়ের জন্য নিরলসভাবে কাটানো প্রতিটি দিন আর নির্ঘুম রাত্রি আমাকে বারবার প্রতিটি বাবা মায়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমার মা-বাবাও নিশ্চয় আমার জন্য এভাবেই কষ্ট করেছেন,অথবা তার চেয়েও বেশি। আর এজন্যই হয়তো মা-বাবা একটা পর্যায়ে এসে অবলম্বন হিসেবে সন্তানে...